তারপরও বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা ভালোই চলছে
ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম
নিউজ আপলোড : ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১

করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় চলছে। তারপরও বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই ভালো চলছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল চ্যালেঞ্জের মুখে। চলতি অর্থবছরটিও চ্যালেঞ্জমুখী। বাংলাদেশ একটা সময় অতিক্রম করছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ১ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক মনে করে- আগামী অর্থবছর (২০২১-২২) তা বেড়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইওর) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার পরে দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মহামারির কারণে ভারত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান এবং নেপালের মাথাপিছু জিডিপির তুলনায় এগিয়ে থাকবে ভারত। তবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।
আইএমএফ আগামী বছরে ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আভাস দিয়েছে, এতে ২০২১ সালে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারত সামান্য ব্যবধানে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাবে। ডলারের হিসাবে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০২১ সালে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হবে, বিপরীতে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এতে ভারতে মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ২ হাজার ৩০ ডলার, বাংলাদেশের হবে ১ হাজার ৯৯৯ ডলার। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে শুধু গায়ানা ও দক্ষিণ সুদান। এদিকে সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ।
বিবিএস বলছে, করোনার আগে গত মার্চ মাসে প্রতি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা। আগস্টে কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৯২ টাকায়। অর্থাৎ পাঁচ মাসের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি আয় কমেছে প্রায় চার হাজার টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি দুটি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, করোনার প্রভাবে দেশের ৭০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয় কমে গেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জরিপে দেখা গেছে, করোনাকালে দেশে নতুন করে এক কোটি ৬৩ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। আর বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশের কৃষির অবস্থান খুবই শক্তিশালী। ফলে মহাসংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি হয়নি। না খেয়ে থাকেনি কোনো মানুষ। এর আগের বছর ২০১৯ সালের শুরুটা ছিল দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই স্বস্তিদায়ক। কেননা সে সময় টানা ১১ বছর ধরে একই মতাদর্শের সরকার দেশ শাসন করায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ হয়ে আসছিল বেশ দ্রুতগতিতে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ছিল উচ্চ। মাথাপিছু আয়ও দ্বিগুণের বেশি হয়েছিল।
কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতি আর বিশ্বমন্দার বাড়তি মাত্রা যোগ হওয়ায় সে বছরের শেষদিকে এসে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা সামষ্টিক অর্থনীতি আচমকা হোঁচট খেয়ে বসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চলতি বছরের শুরু থেকেই চলে আসা করোনা মহামারীর প্রচন্ড ধাক্কা। এক ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সামগ্রিক অর্থনীতি, যার রেশ এখনো শেষ হয়নি। বরং প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা পুরোপুরি কেটে ওঠার আগেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা। ফলে একমাত্র প্রবাসী আয় ছাড়া এখন পর্যন্ত দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সব প্রধান সূচক নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রায় টানা এক দশক ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দেশ।
২০০৯ সালে ৫ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে নতুন এক অধ্যায় শুরু করে বাংলাদেশ। সব শেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এরপর করোনা মহামারিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। আর চলতি অর্থবছর শেষে বাজেটের টার্গেট অনুযায়ী ৮ দশমিক ২ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের আগেই ডবল ডিজিট (২ অঙ্ক) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইভাবে ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৭০৯ মার্কিন ডলার। এখন তা ১৯০০ ডলার অতিক্রম করেছে। সে সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার; যা ইতোমধ্যে ৪৩ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে। রপ্তানি ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে তা ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আগামীতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
স্থায়ী কর্মসংস্থানে খুব একটা আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি না হলেও অস্থায়ী কর্মসংস্থান, বিকল্প কর্মসংস্থান এবং কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে কর্মক্ষম মানুষ আর শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে সরকার। কিন্তু করোনা মহামারি এসে এসব অর্জনে প্রচন্ড আঘাত হানে। ফলে ২০২০ সালে বহুসংখ্যক মানুষ বেকার হয়। দেশে দারিদ্র্যও বাড়ে দ্বিগুণ হারে। এ বছর ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ মানুষের আয় কমে গেছে, যার একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর। এদিকে আসন্ন দিনগুলোও দেশ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য হবে কঠিন চ্যালেঞ্জের। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম থেমে গেছে। একই সঙ্গে পরিবহন, পর্যটন, হোটেল, মোটেল, বিশ্ব চিত্রজগৎ, বিনোদন কেন্দ্রসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বিপুল লোকসানের মুখে পড়ে বহু কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কতটা দীর্ঘায়িত হবে এর ওপর নির্ভর করছে অর্থনীতির ক্ষতির বিষয়টা। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অন্তত আড়াই কোটি মানুষ চাকরি হারাবে। আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বলছে, ২০০৮-২০০৯ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাকেও হার মানাবে এবারের করোনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সব সদস্য দেশকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। সংস্থা দুটি বলেছে, বিশ্ববাণিজ্য থমকে গেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়তে পারে। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ৩০২ কোটি ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
করোনার কারণে যে সংকট চলছে তাতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বৈশ্বিক জিডিপি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উৎপাদন হ্রাস, সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যও কমে যাচ্ছে। এজন্য বছরজুড়েই বিনিয়োগকারীরা ছিলেন উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ ভারতকে পেছনে ফেললেও আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। কারণ ভারতকে পেছনে ফেললেও শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ অনেক পেছনে রয়েছে। একইভাবে মালদ্বীপ ও ভুটান থেকেও আমরা পিছিয়ে রয়েছি। অনেকেই ভারতের কথা বলছেন, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার আরও তিন দেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটানের কথা কেউ বলছেন না। অথচ এ তিনটি দেশ আমাদের চেয়ে ওপরে রয়েছে।
ভারতকে পেছনে ফেলার কথা না ভেবে বরং নিজেদের দক্ষতা-যোগ্যতা বাড়ানো যায় কীভাবে, সেটা দেখা দরকার। এদিকে বাংলাদেশের কর-জিডিপি হার গোটা বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম পর্যায়ে রয়েছে। কর-জিডিপির হার নেপাল, এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের চেয়েও বাজে অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়তে পারে। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ৩০২ কোটি ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে যে সংকট চলছে তাতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বৈশ্বিক জিডিপি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উৎপাদন হ্রাস, সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যও কমে যাচ্ছে। এজন্য বছরজুড়েই বিনিয়োগকারীরা ছিলেন উদ্বিগ্ন।
[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার, পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কো. লি. (BSCL)]
-
মাতৃভাষা বাংলা : আজকের পরিপ্রেক্ষিত
মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিতর দিয়ে মহান একুশের আন্দোলন আজ দেশ-কালের সীমা অতিক্রম করে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে একটি জ্বলন্ত প্রতিবাদ হিসেবে গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের আদর্শ।
-
জমিজমার জাল দলিল শনাক্তকরণের উপায় ও বাতিলের নিয়মাবলী
জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে সাবধান না হলে পরবর্তীতে দীর্ঘদিন নানা ঝামেলা পোহাতে হয়।
-
বিচারপ্রার্থী নারী ও আদালত
নারীর নানাবিধ নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা দেশে-বিদেশে অব্যাহত আলোচনার বিষয়।

-
স্মৃতিতে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস কেড়ে নিল দেশের অগণিত কৃতী সন্তানদের।
-
দয়া করে বাস্তবসম্মত আশ্বাস দিন
আশাবাদ, আশ্বাস এবং স্বপ্নকে কখনও জবাবদিহি করতে হয় না। এ এক নির্মাণশৈলী জাত সুবিধা।
-
ভাষা আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা
ভাষা আন্দোলনের শুরু ১৯৪৮ সালে। ঢাকায় তখন প্রধান দৈনিক পত্রিকা আজাদ এবং ইংরেজি মর্নিং নিউজ।
-
রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্ত হত্যা মামলার আসামিরা : সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের নজির!
বাংলাদেশে বরাবরই সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং শীর্ষ আমলাদের মুখ থেকে একটি বহুল কথিত বাক্য হচ্ছে
-
যাদের টিকা নেয়া জরুরি
কোভিড-১৯ একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশেই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
-
আলী আহমদ চুনকা : সাধারণ মানুষের নেতা
আমরা সাধারণভাবে বলি, একজন রাজনীতিবিদ, তিনি যে দেশ বা যে সমাজেরই হন না কেন
