ম্যাচ শেষে শুভেচ্ছা বিনিময়

সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজটি স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের জন্য ছিল প্রতিশোধের। গত জুলাই মাসে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সফরে গিয়ে অ্যান্টিগা ও জ্যামাইকায় পেস বোলিংয়ে নাকাল হওয়া টাইগাররা চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টকে চোখে সর্ষেফুল দেখিয়েছে স্পিন বলে। ফলে দাপট দেখিয়েই মাত্র আড়াই দিনে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে লিড নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ঘূর্ণি উইকেটে স্পিনারদের সৌজন্যে পাওয়া জয়টা ৬৪ রানের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের এটা দ্বাদশ টেস্ট ম্যাচ জয়। ২০৪ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব-তাইজুলদের ঘূর্ণিতে ক্যারিবিয়ানদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ১৩৯ রানে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের সিলেট টেস্ট থেকেই ফর্মের মধ্যে থাকা তাইজুল নিয়েছেন ৬ উইকেট। এছাড়া দুটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব ও মিরাজ। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের অলআউট করে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাঁচ উইকেটে তোলা ৫৫ রান নিয়ে শনিবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। দিনের শুরুতেই দলীয় ৬৯ রানে গ্যাব্রিয়েলের বলে বোল্ড হয়ে যান ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম (১৯)।

ইনিংস লম্বা হয়নি মেহেদী হাসান মিরাজেরও। দেবেন্দ্র বিশুর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৮ রান করে। সর্বোচ্চ ৩১ রান করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং নাঈম হাসানকেও (৫) প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান বিশু। মোট ৪ উইকেট শিকার করেন এই ক্যারিবিয়ান স্পিনার। রোস্টন চেজের বলে তাইজুল (১) ওয়ারিক্যানের তালুবন্দী হলে ১২৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানে পিছিয়ে থাকা সফরকারীদল ২০৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মহাবিপদে পড়ে যায়। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ঘূর্ণি উইকেটে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরপর দুই ওভারে তুলে নেন দুটি উইকেট। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কাইরন পাওয়েলকে (০) মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করেন তিনি। এক ওভার পরেই শাই হোপকে (৩) প্যাভিলিয়নে পাঠান।

এরপর মঞ্চে আবির্ভাব তাইজুল ইসলামের। তার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। একই ওভারে রোস্টন চেজকে (০) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়ান তিনি। রিভিউ নিয়েও কোন লাভ হয়নি উইন্ডিজের। মধ্যাহ্নবিরতির আগেই ১১ রানে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসের মতোই বিধ্বংসী মেজাজে দেখা দিয়েছিলেন শিমরন হেটমায়ার। সাকিবের এক ওভারে ২ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় তুলে নেন ১৭ রান। শেষ পর্যন্ত এই মারকুটে ব্যাটসম্যান মেহেদী মিরাজের বলে নাঈম হাসানের তালুবন্দী হন।

প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান উইকেটকিপার- ব্যাটসম্যান শন ডারউইচকে এলবিডব্লিউ করেন তাইজুল ইসলাম। রিভিউ নিয়ে নষ্ট করা ছাড়া আর কোন লাভ হয়নি। দেবেন্দ্র বিশুকে (২) বোল্ড করে সফরকারীদের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটান তাইজুল। পরে তাইজুলের বলেই লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন কেমার রোচ (১)। ফিল্ড আম্পায়ার নট-আউট ঘোষণা করলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ। ৭৫ রানে ৮ উইকেট হারানো উইন্ডিজদের হয়ে নবম উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন সুনিল অ্যামব্রিস আর ওয়ারিক্যান। দুজনের ৬৩ রানের জুটি ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিক ফিল্ডারদের মনে। এই শঙ্কাও দূর করেন মেহেদী মিরাজ। তার বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ওয়ারিক্যান (৪১)। এরপর ৪৩ রান করা অ্যামব্রিসকে তাইজুল মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করলে ১৩৯ রানে অল-আউট হয়ে যায় সফরকারীরা।

ঘূর্ণি উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যার মিছিলে শতরানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা ক্রিকেটার হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান মমিনুল হক।